সিলেট: সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটারদের মধ্যে বাড়ছে উৎসাহ। সেই সাথে প্রার্থীরাও মাঠ ছাড়ছেন না। দিনরাত চালিয়ে যাচ্ছিলেন অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা।
শুক্রবার সকালে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন অফিস। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান পেয়েছেন দলীয় প্রতীক নৌকা, আতিকুর রহমান আতিক পেয়েছেন দলীয় প্রতীক লাঙ্গল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া পেয়েছেন দলীয় প্রতীক ডাব ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতস্ত্র প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন মোটরগাড়ি (কার)। প্রতীক বরাদ্দের সময় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক উপস্থিত ছিলেন না। প্রতীক বরাদ্দের পর তার পক্ষের লোকজন বরাদ্দকৃত প্রতীক নিয়ে আসেন। আর প্রতীক বরাদ্ধ পাওয়ার পর পরই মুলত শুরু হলো আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা।
সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া। প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা তাদের কর্মসমর্থকদের নিয়ে ইতিমধ্যে প্রচারনায় নেমে পড়েছেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব শফি আহমদ চৌধুরী দক্ষিণ সুরমার উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন। তিনি শনিবার দুপুরে উপজেলার লালাবাজারে গণসংযোগ শেষে প্রচার মিছিলে যোগদান করেন।
জাপা প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ২৫ জুন শুক্রবার রাতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলেট বাইপাস রোডস্থ জাতীয়পাটি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’র সমন্বয় সভায় যোগদান করেন।
সিলেট জেলা জাতীয় পাটি’র আহবায়ক আলহাজ্ব কুনু মিয়া’র সভাপতিত্বে ও জেলা জাতীয় পাটি’র সদস্য সচিব মোঃ উসমান আলী ও সাবেক সাংগঠনিক বাসির আহমদ’র যৌথ পরিচালনায় সমন্বয় সভায় দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা সভায় যোগদান করেন। আওয়ামীলীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান ২৫জুন শুক্রবার বিকেলে বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজিত কর্মী সভায় যোগদান করেন। রাতে তিনি দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন।
জানা যায়, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। যার সংসদীয় আসন নং ২৩১। চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত অবস্থায় সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটির সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এরপর ১৫ মার্চ এটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৮ জুলাই মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি।
সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে গত ১৫ জুন মনোনয়ন জমা দেন মোট ৬ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া, ফাহমিদা হোসেন লুমা এবং শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম।
এর মধ্যে ফাহমিদা ও মাসুম ছাড়া সবার মনোনয়নপত্র ১৭ জুন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন অফিস। দাখিলকৃত মনোনয়নে ভোটারদের তথ্য যথাযথ না পাওয়ায় ফাহমিদা ও মাসুমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরে তারা আপিল করলেও আগের রায় বহাল রাখে নির্বাচন কমিশন। ফলে তারা দুজইন ঝরে পড়েন নির্বাচন থেকে।
সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উৎসব মুখোর পরিবেশে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৪জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে, প্রতীক বরাদ্দের পর সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ফয়সল কাদের প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনটি সুষ্ঠু হওয়ার লক্ষ্যে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রার্থীরা এমন কিছু করবেন না যাতে নির্বাচন কমিশন আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রয়োজনে আপনাদের প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রাখে নির্বাচন কমিশন। আজ থেকে আপনারা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে পারলেও বেশ কয়েকটি বিধি-নিষেধ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- প্যান্ডাল তৈরি করে নির্বাচনী প্রচারণার অনুষ্ঠান করা যাবে না, ৪ শ বর্গফুটের অধিক জায়গাজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণার অনুষ্ঠান করা যাবে না, নির্বাচনী প্রচারণামূলক তোরণ (গেট) তৈরি করা যাবে না, আলোকসজ্জ্বা করা যাবে না, নির্বাচনী প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশন করা যাবে না, দেয়ালে কালি দিয়ে লিখে প্রচারণা চালানো যাবে না, মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না, প্রার্থীদের (যদি থাকে) বৈধ অস্ত্র সারেন্ডার করতে হবে, নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী কোনো যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে ও একটির বেশি মাইক ব্যবহার করা যাবে না এবং সর্বোপরি কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে কোনো ধরনের মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দলের ক্ষেত্রেও এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।